সম্ভাবনাময় বাগদা চিংড়ি ও কাঁকড়া শিল্পঃ
ইতিকথাঃ ষাটের দশকে দেশের দক্ষিণে অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের ন্যায় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলাতে জোয়ার ও লোনা পানি নিযন্ত্রনের মাধ্যমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে বেড়িবাঁধ নির্মানের ফলে বিভিন্ন আকারের বহু পোল্ডারের সৃষ্টি হয়। এ সকল পোল্ডারের অভ্যন্তরের জমিতে বৃষ্টি নির্ভর একমাত্র আমন ধান উৎপন্ন হতো এবং পানি সরবরাহের গেটের মাধ্যমে ও বাধকেটে বা বাধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশের ফলে প্রাকৃতিক পানির সাথে ভেসে আসা অন্যান্য মাছের পোনার ন্যায় বাগদা চিংড়ির পোনা আটকে পড়তো যা চাষীগণ জাল থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে আহরণ করতো। স্বাধীনতার পর বিশ্ব বাজারে চিংড়ি রপ্তানী ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীগন বৃষ্টি মৌসুমের আগে নদী থেকে বাগদা চিংড়ী পোনা ধরে খালের পানিতে আটকে রেখে ৪-৫ মাস পর বৃষ্টি শুরুর আগেই আহরণ করে তাদের জমিতে আমন ধানের আবাদ করতো। পর্যায়ক্রমে চাষীগন বাগদা চিংড়ীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পানির উর্ববরতা বৃদ্ধি ও সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে বাগদা চিংড়ী চাষ শুরু করে।
বর্তমান অবস্থাঃ ১৯৯০ সাল থেকে কারখানায় চিংড়ী খাদ্য উৎপাদন শুরুহয়, ১৯৯২ সাল থেকে বানিজ্যিক ভাবে হ্যাচারীতে বাগদা চিংড়ী পোনা উৎপাদন শুরুএবং চিংড়ী চাষের উপকরণ প্রাপ্তি সহজলভ্য হওয়ায় এ এলাকায় মানুষের মধ্যে একক ও সমাজভিত্তিক চিংড়ী চাষের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসারিত হয়েছে চিংড়ী চাষের ক্ষেত্র। গত এক দশক আগেও অত্র উপজেলায় বাগদা চিংড়ীর উৎপাদন ছিল ৩৫০০মেঃটন, যা ২০১৩ সালে ৫৭২০মেঃ টঃ উন্নীত হয়েছে।
সাশ্রয়ী দামঃ এখানে উৎপাদিত বাগদা চিংড়ীর দাম অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বাগদা চিংড়ী উৎপাদনের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহজে পাওয়ার কারনে ব্যাপকভাবে বাগদা চিংড়ী উৎপাদিত হয়, ফলে কম মুল্যে বাগদা চিংড়ী ক্রয় করা সম্ভব।
উপকারিতা/উপকারভোগীঃ পাইকগাছা উপজেলাতে ব্যাপক বাগদা চিংড়ী উৎপাদন হওয়ায় এ এলাকার বিশাল একটি জনগোষ্ঠী বাগদা চিংড়ী উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত বিধায় তাদের আর্থিক আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বাগদা চিংড়ী উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ে ভুমিকা রাখে। গরীব,অসহায়,বেকার যুব,ধনী সহ সকল স্তরের মানুষ চিংড়ী চাষে উপকার ভোগ করে থাকেন।
বর্তমান বাজারঃবাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতে এ বাগদা চিংড়ী বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারী ও খুচরা ব্যবাসায়ীরা এসে বাগদা চিংড়ী ক্রয় করেন। বিশ্বের বিভিন্নদেশ সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে এটি সুপরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কর্মসংস্থান তৈরীঃএই বাগদা চিংড়ী শিল্পে কাজ করে অনেক বেকার যুবক-যুবতী তাদের বেকারত্ব দূর করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক দিনমজুর/ব্যবসায়ীরাও এই বাগদা চিংড়ী শিল্পে কাজ করেন।
আশা ব্যঞ্জকঃবাগদা চিংড়ী শিল্প অত্র উপজেলাসহ আশেপাশে অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। বাগদা চিংড়ীর ব্যবসা করে অত্র এলাকার লোকজনের দরিদ্রতা ঘুচেছে এবং অর্থনৈতিক সফলতা লাভ করেছে। ইতোমধ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর সহযোগীতায় ৮০ জন মহিলাকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এতে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসারের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস